ওয়েল্ড মেটালের গঠনগত কতকগুলো অপ্রত্যাশিত ত্রুটির কারণে সঠিকভাবে জোড়া লাগে না, জোড়া অসুন্দর হয়, শক্তি কম হয়, তা ভেঙ্গে যায় বা যাওয়ার প্রবণতা থাকে একে ওয়েন্ডিং এর ত্রুটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর্ক ওয়েল্ডিং সাধারণত নিম্নলিখিত দোষত্রুটিগুলো দেখা যায়।
(১) ফাটল (Cracks)
(২) অল্প গলন (Poor fusion)
(৩) ধাতুমলের অন্তর্ভূক্তি (Shug Inclusion)
(৪) ছিদ্রময়তা (Parosity )
(৫) স্বল্প পেনিট্রেশন (Poor penitration)
(৬) উত্তপ্ত ধাতু ছড়ানো (Spattering)
(৭) আন্ডার কাট (Under Cut)
(৮) পুড়ে যাওয়া বিকৃতি (Burn Through)
(৯) ওভার ল্যাপিং (Over Lapping)
(১০) বিকৃতি (Distortion)
ফাটল :
ওয়েল্ড মেটালে বা বেস মেটালে যে কোন ধরনের ফাটল ফাটলত্রুটি হিসেবে বিবেচিত হয়। অর্থাৎ ওয়েল্ডিং করার পর বেসমেটাল এবং ওয়েল্ড মেটালের সংযোগস্থলে, অথবা বেসমেটাল বা ওয়েল্ড মেটালে যে চিড় ধরে তাকে ফাটল বলে। যে ফাটলগুলি খালি চোখে দেখা যায়, তাদেরকে ম্যাক্রো ক্র্যাকিং এবং যে ফাটলগুলো খালি দেখা যায় না, মাইক্রোসকোপ এর সাহায্যে দেখতে হয়, সে ফাটলগুলিকে মাইক্রো ক্র্যাকিং বলে।
অল্প গলন :
মূল ধাতুর সাথে ওয়েল্ড মেটালের বা ওয়েল্ড মেটালের পুরোপুরিভাবে মিশ্রণের অভাবকে অল্প গলন বলে। কাল দাগ দ্বারা দেখান হয়েছে যে, ওয়েল্ড মেটাল মূল ধাতুর সাথে মিশেনি।
ধাতুমলের অন্তর্ভুক্তি :
গলিত ওয়েল্ড যখন জমাট বাধে তখন তার অভ্যন্তরে কোন কোন সময় ধাতুমল আটকে পড়ে একে ধাতুমলের অন্তর্ভুক্তি বলে।
ছিদ্রময়তা :
ওয়েল্ড শেষে ওয়েল্ড মেটালে অনেক সময় একাধিক ছোট ছোট ছিদ্র দেখা যায় একে ছিদ্রময়তা বলে। যখন এ ছিদ্রগুলো বড় মাপের অর্থাৎ প্রায় ২-৩ মিলিমিটার হয় তখন তাকে রোহোল বলে।
স্বল্প পেনিটেশন
ইলেকট্রোড গলে মূল ধাতুর অভ্যন্তরে যে পর্যন্ত প্রবেশ করা প্রয়োজন সে পর্যন্ত প্রবেশ না করলে তাকে স্বল্প পেনিট্রেশন বলে।
উত্তপ্ত ধাতু ছড়ানো
ওয়েন্ডিং করার সময় ইলেকট্রোড গলে জোড়ার স্থানে না পড়ে তার চারপার্শ্বে ছড়িয়ে পড়ে এটি ইংরেজিতে স্প্যাটার ত্রুটি নামে পরিচিত।
আন্ডার কটি
বেস মেটাল কিংবা ওয়েল্ড মেটালের পার্শ্বদেশ আর্কের অতিরিক্ত উত্তাপে কেটে গেলে তাকে আভারকটি বলে।
পুড়ে যাওয়া
আর্কের অতিরিক্ত উত্তাপে জোড়াস্থানে পুড়ে গর্ত হয়, ফলে গলিত ধাতু জোড়া স্থানে না জমে নিচে পড়ে যায়। এটিই পুড়ে যাওয়া ত্রুটি।
বিকৃতি
ওয়েন্ডিং এর সময় মূল ধাতুটি অসমভাবে উত্তপ্ত এবং পরবর্তীতে ঠাণ্ডা হওয়ার কারণে বেসমেটাল মোচড়ে কিংবা বেঁকে যায় একে বিকৃতি ত্রুটি বলে।
ওভার ল্যাপিং
মাত্রাতিরিক্ত ওয়েল্ড মেটাল যখন মূল ধাতুর উপর জমে থাকে তাকে ওভার ল্যাপিং বলে।
বিভিন্ন কারণে ওয়েল্ডিং এর দোষত্রুটি হতে পারে, যেমন কারেন্ট এবং ভোল্টেজ এর মান সঠিকভাবে নির্বাচন করতে না পারা, মূল ধাতু ঠিকমত পরিষ্কার না করা, জোড়ার পার্শ্বদেশ ঠিকমত তৈরি করতে না পারা, ইলেকট্রোড এবং বেস মেটালের মাঝের কোণ ঠিক না হওয়া, ইলেকট্রোড চালানোর গতি ঠিক না হওয়া, ফ্লাক্স এবং ইলেকট্রোডে ময়লা থাকা প্রিহিটিং এবং পোস্টহিটিং না করা ইত্যাদি বহুবিধ কারণে ওয়েল্ডিং ত্রুটি দেখা দেয়। নিম্নে বিভিন্ন প্রকার ত্রুটির সম্ভাব্য কারণগুলো উল্লেখ করা হলো।
ত্রুটির ধরণ | ত্রুটির কারণ |
---|---|
ফাটল | ১। জবের অংশসমূহের খুব বেশি দৃঢ়তা, অর্থাৎ জোড়াস্থান যখন খুব উত্তপ্ত ছিল তখন তা প্রসারিত হতে না পারা এবং সংকোচনের সময় সংকোচিত হতে না পারা। ২। জোড়ার পার্শ্বদেশ প্রস্তুতি ঠিকমত না হওয়া। ৩। ইলেকট্রোড চালানোর গতি বেশি হওয়া। ৪। ইলেকট্রোডে হাইড্রোজেন এর পরিমাণ বেশি থাকা ইত্যাদি। |
ধাতুমলের অন্তর্ভূক্তি | ১। বেসমেটাল ঠিকমত পরিষ্কার না থাকলে। ২। ইলেকট্রোড বা ফ্লাক্সে ময়লা থাকলে। |
ছিদ্রময়তা | ১। ইলেকট্রোড কোটিং এ আদ্রতা থাকা। ২। দ্রুত ওয়েল্ডিং করা। ৩। মূল ধাতুতে ময়লা থাকা। ৪। বেসমেটাল বা মূলধাতুতে সালফারের পরিমাণ বেশি হওয়া । ৫। আর্ক দৈর্ঘ্য অতি ছোট বা বড় হওয়া ইত্যাদি । |
উত্তপ্ত ধাতু ছড়ানো | ১। কারেন্টের পরিমাণ বেশি হওয়া। ২। আর্ক দৈর্ঘ্য বেশি হওয়া। ৩। ইলেকট্রোডের ধরার কোণ ঠিক না হওয়া। ৪। আদ্র ইলেকটট্রেড ব্যবহার করলে |
আন্ডার কাট | ১। কারেন্টের পরিমাণ বেশি। ২। ইলেকট্রোডের ব্যাস বেশি। ৩। আর্ক দৈর্ঘ্য বেশি। ৪। বেসমেটাল বা মূলধাতুতে মরিচা পড়া। ৫। দ্রুত গতিতে ওয়েন্ডিং করা ইত্যাদি। |
পুড়ে যাওয়া | ১। কারেন্ট বেশি। ২। অতি দীর্ঘ আর্ক। ৩। ইলেকট্রোড অতি ধীরে চালানো ইত্যাদি । |
বিকৃতি | ১। অল্প ব্যাসের ইলেকট্রোড । ২। বেশি রান টানা । ৩। খুব ধীর গতিতে ওয়েল্ডিং করা। ৪। জোড়া প্রস্তুতি ঠিক না হওয়া |
ওভার ল্যাপিং | ১। কারেন্ট অতি কম হলে। ২। ইলেকট্রোড এর ব্যাস বেশি হলে। ৩। ওয়েল্ডিং এর গতি মন্থর হলে। ৪। আর্ক অতি দীর্ঘ হলে ইত্যাদি। |
আর্ক ওয়েন্ডিং এর উল্লেখিত দোষ ত্রুটিগুলোর ফলাফল নিম্নে প্রদত্ত হলোঃ
ত্রুটির ধরণ | ফলাফল |
---|---|
ফাটল | ওয়েল্ড মেটাল এবং বেস মেটালে ফাটল দেখা দেয়, জোড়া দুর্বল এবং ক্ষেত্র বিশেষ অকেজো হয়। |
অল্প পলন | বিট দেখতে অসমান হবে, অসুন্দর হবে এবং জোড়ার শক্তি কম হবে। |
ধাতু মলের উপস্থিতি | জোড়া দুর্বল হয়, ক্ষেত্র বিশেষে অকেজো হয়। |
ছিদ্রময়তা | ওয়েল্ড বিড দেখতে অসুন্দর হবে, জোড়ার শক্তি কম হবে। |
স্বল্প পেনিট্রেশন | জোড়া দুর্বল হবে এবং এটি লিকপ্রুফ হবে না। |
উত্তপ্ত ধাতু ছড়ানো | জোড়া দুর্বল হয়, জবের পৃষ্ঠদেশ অতি অসুন্দর হয়। |
পুড়ে যাওয়া | গর্ত বিশিষ্ট জব হয়, লিক প্রুফ হয় না, শক্তি কম হয় এবং দেখতে অসুন্দর হয়। |
বিকৃতি | জবের আকৃতি পরিবর্তন হয় এবং বেশি বিকৃতি হলে তা ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়। |
ওভার ল্যাপিং | মেশিনিং খরচ বেশি হয়, মাপের সুক্ষ্মতা থাকে না এবং জোড়ার শক্তি কম হয়। |
নিম্নে আর্ক ওয়েল্ডিং এর বিভিন্ন দোষ ত্রুটিসমূহ এড়ানোর উপায়সমূহ উল্লেখ করা হলো।
বিকৃতি স্ট্রেস উপশমঃ
প্রি-সেটিং, স্টেপ ব্যাক মেথড এবং স্কিপ মেথড প্রয়োগ, জিগ ও ফিচারের সাহায্যে কাজ সমাধা করতে হবে।
• স্লাগ ইনক্লুশনঃ
ধাতু যথাযথ ও সুন্দরভাবে পরিষ্কার করতে হবে। সঠিক কোণে ইলেকট্রোড চালনা করে সঠিক কারেন্টে ওয়েল্ডিং কাজ সমাধা করতে হবে। সঠিক ইলেকট্রোড ব্যবহার করতে হবে এবং পূর্ববর্তী রানের শপ সুন্দরভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
• আন্ডার কাটঃ
সঠিক তাপমাত্রায় কারেন্ট নিরূপণ ও সঠিক গতিতে ইলেকট্রোড চালনা করতে হবে।
অসম্পূর্ণ পেনিট্রেশনঃ
সঠিক জোড় প্রস্তুত করতে হবে, সঠিক পুরুত্বের ইলেকট্রোড ও সঠিক ধরনের ইলেকট্রোড এবং সঠিক কারেন্ট নির্বাচন করতে হবে। রুটে রানের গ্যাপ এর সাথে ইলেকট্রোডের ব্যাসের মিল থাকতে হবে। সঠিক গতিতে ইলেকট্রোডের চালনা করতে হবে এবং আর্ক লেংথ বজায় রাখতে হবে।
স্প্যার্টারঃ
সঠিক কারেন্ট নির্বাচন, সঠিক আর্ক দৈর্ঘ্য বজায় রাখা ও শুষ্ক ইলেকট্রোড ব্যবহার করতে হবে।
কম গলা :
অপেক্ষাকৃত বড় ব্যাসের ইলেকট্রোড ব্যবহার করা, সঠিক কারেন্টে ওয়েন্ডিং করা, সঠিক কোণ ও গতিতে ইলেকট্রোড চালনা করা, জোড় স্থান ভালোভাবে পরিষ্কার ও সঠিকভাবে ওয়েল্ডিং এর ধাপসমূহ বজায় রাখা ।
রোহোল :
ওয়েল্ডিং এর ধাপসমূহ ভালোভাবে পরিষ্কার করা, সঠিক কারেন্ট ও আর্ক লেংথ বজায় রাখা, শুষ্ক ইলেকট্রেড ব্যবহার করা
পুড়ে ছেদ হওয়াঃ
সঠিক কারেন্ট নিরূপণ করা, সঠিক ইলেকট্রোড নির্বাচন করা এবং সঠিক আর্ক লেংথ ও ইলেকট্রোড গতি বজায় রাখা ।
ওভার ল্যাপঃ
ঠিকমত কারেন্ট ব্যবহার করা, আর্ক লেংথ ছোট ও একই রাখা, ধাতু সুন্দরভাবে পরিষ্কার করা। সঠিক গতিতে ইলেকট্রোড চালনা করা। প্রয়োজনীয় সাইজের ইলেকট্রোড ব্যবহার করা।
অতিরিক্ত উত্তল ও অবতল আকৃতিঃ
সঠিক পরিমাণ কারেন্ট ব্যবহার করা, সঠিক কোণে ইলেকট্রোড চালনা করা, ঠিক সাইজের ইলেকট্রোডের ব্যবহার করা।
ছিদ্রময়তাঃ
কার্যবস্তু সুন্দরভাবে পরিষ্কার করা। শুষ্ক ইলেকট্রোড ব্যবহার করা, সঠিক কোণে ইলেকট্রোড চালনার গতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, সঠিক কারেন্ট ব্যবহার করা।
ফাটলঃ
সঠিক ইলেকট্রোডের ব্যবহার, সঠিক তাপমাত্রায় কারেন্ট নিরূপণ করা, ওয়েল্ডিং এর ধাপসমূহ সঠিকভাবে বজায় রাখা। ১ম রান টানার পরে সেটা ভালোভাবে পরিষ্কার করে ২য় রান টানতে হবে। ধাতু জোড়কে সর্বদা স্ট্রেসমুক্ত রাখতে হবে। কোথাও ফাটল দেখা দিলে উক্ত স্থান কর্তন করে নতুন করে জোড় প্রস্তুত করতে হবে। মনে রাখতে হবে ফাটল মেরামত যোগ্য ত্রুটি নয়। এটি কর্তন করতে হবে।
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। ওয়েল্ডিং ত্রুটি বলতে কী বোঝায় ?
২। ম্যাক্রো ক্র্যাকিং কাকে বলে?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
৩। পাঁচটি ওয়েল্ডিং ত্রুটির নাম লেখ।
৪। স্প্যাটার ত্রুটির কারণ কী?
রচনামূলক প্রশ্ন
৫। চিত্র অংকন করে আর্ক ওয়েল্ডিং এর ত্রুটিগুলো সম্পর্কে লেখ।
(ক) আন্ডার কাট
(খ) স্বল্প পেনিট্রেশন
(গ) ওভার ল্যাপিং এবং
(ঘ) ধাতুমলের অন্তর্ভুক্তি।
৬। উপরের ত্রুটিগুলোর কারণ লেখ।
৭। আর্ক ওয়েল্ডিং এর ৫টি ত্রুটির কারন ও প্রতিরোধের উপায়গুলি লিখ।